নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখক ও কমুউনিটি এ্যাক্টিভিষ্ট, বাকা সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন ও বাকা সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার চৌধুরীর লেখা তিনটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান গতকাল ২৭ জুন রোববার ব্রঙ্কসে অনুষ্ঠিত হয়। বইগুলো হচ্ছে আহবাব চৌধুরীর ভ্রমন বিষয়ক বই ‘জিরো পয়েন্ট’, সারোয়ার চৌধুরীর গল্প কাঙাল ভালোবাসা ও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ বোহেমিয়ান ভাবনা।

এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুল হলরুমে বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন আয়োজিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাকা’র কোষাধ্যক্ষ ও প্রকাশনা উৎসব এর আহবায়ক শাহ বদরুজ্জামান রুহেল। প্রকাশনা উৎসবের সদস্য সচিব কবি হাবিব ফয়েজি’র সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক কবি মাকসুদা আহমেদ।

এ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার, সংস্কৃতিকর্মী, সমাজকর্মী ও সাংবাদিক ছাড়াও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।
আহবাব চৌধুরীর জিরো পয়েন্ট বইটির ওপর আলোচনা করেন সাহিত্য একাডেমির পরিচালক মোশারফ হোসেন ও কবি শিউল মনজুর এবং সারোয়ার চৌধুরীর কাঙাল ভালোবাসা ও বোহেমিয়ান ভাবনার ওপর আলোচনা করেন প্রবাসের অতি পরিচিত সাহিত্য সমালোচক সোনিয়া কাদের, কবি এবিএম সালেহ উদ্দিন, কবি নাসরিন চৌধুরী ও প্রফেসর আমিনুল হক চুন্নু।
এছাড়া আহবাব চৌধুরীর মেয়ে রাইদা মুজাহিদ চৌধুরী তার বাবার লেখা নিয়ে মঞ্চে এসে আলোচনায় অংশ নেন। একইসঙ্গে সারোয়ার চৌধুরীর ছেলে সাজিদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সালমা চৌধুরী গৃহকর্তার সাহিত্যকর্ম বিষয়ে প্রসংশাসূচক বক্তব্য রাখেন।


প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রবাসী এই দুই লেখকের প্রকাশিত বইয়ের ওপর ছয়জন প্যানেল আলোচক ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বর্তমান সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিক, আইনজীবি এন মজুমদার, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল, কমুউনিটি এ্যাক্টিভিষ্ট সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির উপদেষ্টা আব্দুল হাসিম হাসনু, লেখক পলি শাহীনা, কবি মাকসুদা আহমেদ, কবি আবদুল বাতেন প্রমুখ। লেখক আহবাব চৌধুরী ও সারওয়ার চৌধুরী তাদের অনুভূতি তুলে ধরেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন আলোচক বলেন, কর্মব্যস্ত প্রবাস জীবনে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা ভিশন কঠিন কাজ উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, আমাদের অতি প্রিয় দুই লেখক এই কঠিন কাজকেই সহজ হিসেবে করে দেখিয়ে দিয়েছেন।

এর মধ্য দিয়ে তারা অসামান্য ও প্রসংশা পাওয়ার মতো ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন। একদিন এই লেখকদ্বয় থাকবেন না কিন্তু তাদের বংশধরেরা থাকবে। পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সম্মানের সঙ্গে তাদের স্মরণ করবে।
আলোচকরা আরও বলেন, আসলে প্রতিটি মানুষই অসীম শক্তি ও সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। কিন্তু এই শক্তি ও সম্ভাবনাকে সব সময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে রাখে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস।

অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহন করা সত্ত্বেও পারিবারিক, সামাজিক, ও রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে প্রচলিত ধারনার শৃঙ্খলে সে বন্দী হয়ে পড়ে। পরিবেশ তাকে যা ভাবতে শেখায় সে তাই শেখে, যা করতে বলে সে তা-ই করে।


যে হতে পারত শতাব্দীর অভিযাত্রী, অমর কথাশিল্পী, হতে পারতো মহান নেতা বা বিপ্লবী, হতে পারত আত্মজয়ী বীর বা ধর্মবেত্তা সেই মানব শিশুই ভ্রান্ত ধারনার বন্দী হয়ে পরিনত হচ্ছে কর্মবিমুখ, হতাশ, ব্যর্থ কাপুরুষে।

এ ব্যর্থতার কারন মেধা বা সামর্থ্যের অভাব নয়। এ ব্যর্থতার কারন বস্তুগত জিঞ্জির নয়, এ ব্যর্থতার কারন মনোজাগতিক শিকল।

লেখক আহবাব চৌধুরী ও সারোয়ার চৌধুরী এই শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। বরং বলা যায় তারা শেকল ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। এসে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন জীবনে বাধা আসতে পারে, শত প্রতিকূলতা আসতে পারে কিন্তু চাইলেই যে কেই ঘুরে দাড়াতে পারে।

মনের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে স্মরণীয় বরনীয় হতে পারে।

অনুষ্ঠান শেষে লেখক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা ফটোসেশন ও নৈশভোজে অংশ নেন।

শেয়ার করুন
Bookmark the permalink.